রোববার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫

| ৩ কার্তিক ১৪৩২

ব‍্যক্তিগত ও জাতীয় উপাত্ত ব‍্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ ২০২৫

তথ্যে সরকারি নজরদারির অবাধ ঝুঁকি দেখছে টিআইবি

টেকস্ক্রল নেটওয়ার্ক

প্রকাশ: ১১:১২, ১২ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ১১:৪৮, ১২ অক্টোবর ২০২৫

তথ্যে সরকারি নজরদারির অবাধ ঝুঁকি দেখছে টিআইবি

টিআইবির বিবৃতির স্ক্রিনশট

বিশেষজ্ঞ পরামর্শ ও অংশীজন সম্পৃক্ততা সম্পন্ন না করে ব‍্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৫, জাতীয় উপাত্ত ব‍্যবস্থাপনা অধ‍্যাদেশ, ২০২৫ এর খসড়া উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদনে হতাশা  জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ--টিআইবি।  একইসঙ্গে, উভয় ক্ষেত্রে উক্ত অধ্যাদেশ দুইটি স্থগিত করাসহ পর্যাপ্ত অংশীজনের সম্পৃক্ততা ও বিশেষজ্ঞ মতামত গ্রহণপ্রক্রিয়া সন্তোষজনকভাবে সম্পন্ন করা সাপেক্ষে অগ্রসর হওয়ার আহবান জানায় সংস্থাটি। 

শনিবার এক বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, উপাত্ত সুরক্ষা আইনের খসড়া নিয়ে কর্তৃত্ববাদী সরকারের আমলে অংশীজনদের সাথে টানাপোড়েন চলমান অবস্থায় সরকার পতন হয়। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর সক্রিয়ভাবে অন্তর্ভুক্তিমূলক অংশগ্রহণ-প্রক্রিয়া অনুসরণ করেছে এবং বেশকিছু ইতিবাচক পরিবর্তন সম্ভব হয়েছে। তবে, খসড়ায় গুরুত্বপূর্ণ দুর্বলতা ও ঝুঁকিবিষয়ক অংশীজনের পরামর্শ উপেক্ষা করে সরকার একতরফাভাবে সর্বশেষ খসড়া সম্পর্কে গোপনীয়তার আশ্রয় নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন গ্রহন করেছে, যা নিন্দনীয়। 

টিআইবির  নির্বাহী পরিচালক আরও বলেন, অনুমোদিত খসড়ায় বিশ্বজুড়ে মেনে চলা উপাত্ত সুরক্ষা মূলনীতি যেমন- আইনসম্মততা, ন্যায্যতা ও স্বচ্ছতা, উদ্দেশ্য সীমাবদ্ধতা, তথ্য ন্যূনতমীকরণ, নির্ভুলতাসহ সততা ও গোপনীয়তা এবং জবাবিদিহির বিষয়গুলো ছুড়ে ফেলা হয়েছে। যে বিষয়গুলোকে এই ধরনের আইনের প্রাণ বলে ধরা হয়। 

খসড়াতে একইভাবে উপাত্ত-জিম্মাদার ও প্রক্রিয়াকারীকে তার দায়িত্ব ও কর্তব্য থেকে ১৫(৪) উপ-ধারায় যেভাবে ছাড়ের সুযোগ তৈরি করা হয়েছে, তা শুভংকরী ফাঁকি। ধারা ২৪ অব্যাহতি-সংক্রান্ত বিষয়াদিতে ‘অপরাধ প্রতিরোধের’ নামে ব্যক্তিগত উপাত্তে যে ঢালাও প্রবেশাধিকারের সুযোগ রাখা হয়েছে, তা উল্লেখ করে ড. জামান বলেন, কী বিবেচনায়, কোন উদ্দেশ্যে উপাত্তের সুরক্ষার নামে নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ার বিধানবলী অধ্যাদেশটিতে বলবৎ রাখা হয়েছে, তার ব্যাখ্যা জরুরি। জাতীয় নিরাপত্তা এবং জনগণের স্বার্থরক্ষার নামে ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার করার এখতিয়ারও বহাল তবিয়তে রাখা হয়েছে। অথচ বিচারবিভাগীয় তদারকি ছাড়া সরকারি সংস্থাকে ডেটা সার্ভারে বাধাহীন অনুপ্রবেশের সুযোগ দিলে, তা অপব্যবহার হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। তা ছাড়া আইনের মূল চেতনায় ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা-সংক্রান্ত সাংবিধানিক অঙ্গীকার নিশ্চিতের বিষয় প্রতিফলিত হয়নি। যা সত্যিই বিস্ময়কর।

তথ্যের অপব্যাহারকে যেভাবে আইনটিতে ফৌজদারি অপরাধে রূপ দেয়াও হয়েছে, তা সত্যিই আপত্তিকর এবং ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এর প্রভাব কতোটা পড়বে, তা বিবেচ্য ছিলো বলেও প্রতীয়মান হয়নি বলেও মনে করে টিআইবি।

বর্তমান ডিজিটালনির্ভর বিশ্বব্যবস্থায় এ পরিসর-সম্পর্কিত আইন করার উদ্যোগ গ্রহণ অবশ্যই প্রয়োজন। কিন্তু সামগ্রিকভাবে ডিজিটাল জগতের পরিসরের ব্যাপকতা বিবেচনায় না নিয়ে, বিদ্যমান ব্যবস্থার সমস্যা চিহ্নিত না করে, কেবল মাত্র একটি বা দুটি আইন দিয়ে এই বিষয়টির বহুমুখী সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা বা উদ্যোগ নতুন জটিলতাই বাড়াবে এবং বহুমাত্রিক অধিকারহরণ, বিশেষ করে ব‍্যাক্তিগত ও ব‍্যবসায়িক তথ্যের ওপর সরকারি নজরদারির ঝুঁকি বাড়বে বলেও মনে করে টিআইবি। 

এ সম্পর্কিত খবর
আরও পড়ুন